পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) || HSC এইচ এস সি বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
সব
ভাষায় লিঙ্গভেদে শব্দভেদ আছে, বাংলা ভাষায়ও আছে।
বাংলা
ভাষার বহু বিশেষ্য পদ রয়েছে যাদের কোনোটিতে পুরুষ ও কোনোটিতে স্ত্রী বোঝায়। যে শব্দে
পুরুষ বোঝায় তাকে পুরুষবাচক শব্দ আরে যে শব্দে স্ত্রী বোঝায় তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে।
যেমন: বাপ-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে- কেউই মৃত্যুর সময় তার কাছে ছিলো না। এ বাক্যে বাপ,
ভাই ও ছেলে পুরুষবাচক শব্দ, আর মা, বোন ও মেয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ। তৎসম পুরুষবাচক বিশেষ্য
শব্দের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ ব্যবহৃত এবং স্ত্রীবাচক বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে স্ত্রীবাচক
বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। যেমন- বিদ্বান লোক এবং বিদুষী নারী। এখানে ‘লোক’ পুরুষবাচক বিশেষ্য
এবং নারী স্ত্রীবাচক বিশেষ্য। ’বিদ্বান’ পুরুষবাচক বিশেষণ এবং ’বিদুষী’ স্ত্রীবাচক
বিশেষণ। কিন্তু বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের এ নিয়ম মানা হয় না। যেমন- সংস্কৃতে
“সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা” বাংলায় “সুন্দর বালক ও সুন্দুর বালিকা”।
বাংলায়
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
১/
বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত
১.
পতি ও পত্নীবাচক অর্থে এবং ২. পুরুষ ও মেয়ে
বা স্ত্রীজাতীয় অর্থে।
১.
স্বামী ও পত্নীবাচক অর্থে:
আব্বা-আম্মা, চাচা-চাচী, কাকা-কাকী, জেঠা-জেঠী, দাদা-দাদী, নানা-নানী, নন্দাই-ননদ,
দেওর-জা, ভাই-ভাবী, বাবা-মা, মামা-মামী ইত্যাদি।
২.
সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রীজাতীয় অর্থে:
খোকা-খুকী, পাগল-পাগলী, বামন-বামনী, ভেড়া-ভেড়ী, মোরগ-মুরগী, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ।
২/
বাংলা স্ত্রী প্রত্যয়
পুরুষবাচক
শব্দের সঙ্গে কতগুলো প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। এগুলো হলো: ঈ, নি,
নী, আনী, ইনী, ন।
১.
ঈ-প্রত্যয়: বেঙ্গমা-বেঙ্গমী,
ভাগনা/ভাগনে-ভাগনী।
২.
নী-প্রত্যয়: কামার-কামারনী,
জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, মজুর-মজুরনী ইত্যাদি।
৩.
পুরুষবাচক শব্দের শেষে ঈ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে নী হয় এবং আগের ঈ ই হয়। যেমন: ভিখারি-ভিখারিনী,
অভিসারী-অভিসারিণী।
৪.
আনী-প্রত্যয়: ঠাকুর-ঠাকুরনী, নাপিত-নাপিতানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী ইত্যাদি।
৫.
ইনী-প্রত্যয়: কাঙল-কাঙলিনী, গোয়ালা-গোয়ালিনী, বাঘ-বাঘিনী ইত্যাদি।
উন-প্রত্যয়:
ঠাকুর-ঠাকরুন/ঠাকুরানী।
আইন-প্রত্যয়:
নতুন নতুন প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন- ঠাকুর-ঠাকুরাইন।
দ্রষ্টব্য:
বাংলায় কতগুলো তৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের পরে আবার স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন-
অভাগা-অভাগী/অভাগিনী, ননদাই-ননদিনী/ননদী ইত্যাদি।
৩/
নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ
কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। এগুলোর পুরুষবাচক শব্দ নেই। যেমন- সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা ইত্যাদি।
৪/ কতগুলো শব্দের আগে নর, মদ্দা ইত্যাদি পুরুষবাচক শব্দ এবং স্ত্রী, মাদী, মাদা ইত্যাদি স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- নর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল-মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস-মাদী হাঁস, মদ্দা ঘোড়া-মাদী ঘোড়া, পুরুষ লোক-মেয়ে লোক/স্ত্রীলোক, বেটাছেলে-মেয়েছেলে, পুরুষ কয়েদী স্ত্রী/মেয়ে কয়েদী,এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর, বলদ গরু-গাই গরু ইত্যাদি।
৫/ কতগুলো পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন- কবি মহিলা কবি, ডাক্তার-মহিলা ডাক্তার, সভ্য-মহিলা সভ্য, কর্মী-মহিলা কর্মী, শিল্পী-মহিলা বা নারী শিল্পী, পুলিশ-মহিলা পুলিশ ইত্যাদি।
৬/ কতগুলো শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- বোন-পো, বোন-ঝি, ঠাকুর-পো, ঠাকুর-ঝি, ঠাকুর দাদা/ঠাকুরদা-ঠাকুরমা, গয়লা-গয়লা বউ, জেলে-জেলে বউ ইত্যাদি।
৭/ অনেক সময় আলাদা আলাদা শব্দে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক বোঝায়। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে, সাহেব-বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলাইন/দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন, তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী ইত্যাদি।
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ-নবম দশম শ্রেণি বই |
সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয়-
তৎসম
পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা, প্রভূতি প্রত্যয়গোগে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত
হয়। যেমন-
১.
আ-যোগে
ক/ সাধারণ অর্থে: মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা ইত্যাদি।
খ/ জাতি বা শ্রেণিবাচক: অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা ইত্যাদি।
২.
ঈ-প্রত্যয় যোগে
ক/ সাধারণ অর্থে: নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী ইত্যাদি।
খ/ জাতি বা শ্রেণিবাচক: সিংহ-সিংহী, মানব-মানবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী ইত্যাদি।
৩/
ইকা-প্রত্যয় যোগে
ক.
যেসব শব্দের শেষে ’অক’ রয়েছে সেসব শব্দে ’অক’ স্থলে ’ইকা’ হয়। যেমন: বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা,
গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিক ইত্যাদি। কিন্তু গণক-গণকী, নর্তক-নর্তকী,
চাতক-চাতকী, রজক-রজকী (বাংলায়) রজকিনী।
খ. ক্ষুদ্রার্থে ইকা যোগ হয়। যেমন- নাটক-নাটিকা, মালা-মালিকা, গীতা-গীতিকা, পুস্তক-পুস্তিকা ইত্যাদি। (এগুলো স্ত্রী নয়, ক্ষুদ্রার্থে প্রত্যয়) ।
৪/ আনী-যোগ করে: ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী (কিন্তু আচার্যের কর্মে নিয়োজিত অর্থে আচার্য)। এরূপ: শূদ্র-শূদ্রা (শূদ্র জাতীয় স্ত্রীলোক), শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী), ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া/ত্রিয়ানী ইত্যাদি।
আনী-প্রত্যয় যোগে কোনো কোনো সময় অর্থের পার্থক্য ঘটে। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ) ।
৫/
ঈনী, নী, যোগে: মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী-মেধাবিনী, দুঃখী-দুঃখিনী
ইত্যাদি।
৬/
বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ
ক.
যেসব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ’তা’ স্ত্রীবাচক বোঝাতে সেসব শব্দে ’ত্রী’ হয়। যেমন- নেতা-নেত্রী,
কর্তা-কর্ত্রী, শ্রোতা-শ্রোত্রী, ধাতা-ধাত্রী।
খ.
পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত, বান, মান, ঈয়ান থাকলে যথাক্রমে অতী, বতী, মতি, ঈয়সী হয়।
যথা- সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুণবান-গুণবতী, রূপবান-রূপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী,
গরীয়ান-গরিয়সী।
গ.
কোনো কোনো পুরুষবাচক শব্দ থেকে বিশেষ নিয়মে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন- সম্রাট-সম্রাজ্ঞী,
রাজা-রানি, যুবক-যুবতী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, নর-নারী, বন্ধু-বান্ধবী, দেবর-জা, শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী,
স্বামী-স্ত্রী, পতি-পত্নী, সভাপতি-সভানেত্রী ইত্যাদি।
বিদেশি
স্ত্রীবাচক শব্দ: খান-খানম,
মরদ-জেনানা, মালেক-মালেকা, মুহতারিম-মুহতারিমা, সুলতান-সুলতানা।
নিত্য
স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ: সতীন, অর্ধাঙ্গিনী, কুলটা, বিধবা, অসূর্যস্পশ্যা, অরক্ষণীয়া,
সপত্নী ইত্যাদি।
দ্রষ্টব্য-
১. কতগুলো বাংলা শব্দে পুরুষ
ও স্ত্রী দু-ই বোঝায়। যেমন-জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ইত্যাদি।
২. কতগুলো শব্দে কেবল পুরুষ
বোঝায়। যেমন- কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার, ইত্যাদি।
৩. কতগুলো শব্দ শুধু স্ত্রীবাচক
হয়। যেমন- সতীন, সৎমা, সধবা ইত্যাদি।
৪. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটি
করে স্ত্রীবাচক শব্দ রয়েছে। যথা- দেবর-ননদ (দেবরের বোন)/জা (দেবরের স্ত্রী), ভাই- বোন
এবং ভাবী (ভাইয়ের স্ত্রী), শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী। (শিক্ষিকা) (পেশা অর্থে) এবং দাদা-দিদি
(বড় বোন) এবং বৌদি (দাদার স্ত্রী) ।
৫. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের
বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন: সুন্দর বলদ-সুন্দর গাই, সুন্দর ছেলে-সুন্দর মেয়ে, মেজ
খুড়ো-মেজ খুড়ি ইত্যাদি।
৬. বিধেয় বিশেষণ অর্থাৎ বিশেষ্যের
পরবর্তী বিশেষণও স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- মেয়েটির পাগল হয়ে গেছে (পাগলি হয়ে গেছে হবে
না) । আসমা ভয়ে অস্থির (অস্থিরা হবে না) ।
৭. কুল-উপাধিরও স্ত্রীবাচকতা রয়েছে। যেমন: ঘোষ (পুরুষ) ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে) ।
No comments