করোনা ভাইরাস কি? করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা


করোনা ভাইরাস-

এরইমধ্যে পৃথিবীজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে করোনা ভাইরাস চীনে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জন মারা গেছে। কী এই ভাইরাসের লক্ষণ, চিকিৎসাই বা কী? নিয়ে বিবিসি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোগীদের শরীরে নিউমোনিয়া তৈরি করছে, এমন একটি ভাইরাস সবসময়েই উদ্বেগজনক। ফলে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা চরম সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু এটা কি আজকালের একটি প্রাদুর্ভাব নাকি আরো বিপজ্জনক কোন রোগের লক্ষণ?


চীনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে।
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায় নি।
ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।

২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।

''সার্সের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনো আমরা ভুলতে পারিনি, ফলে নতুন ভাইরাসের প্রচণ্ড ভীতির তৈরি হয়েছে। কিন্তু ধরণের রোগ মোকাবেলায় আমরা এখন অনেক বেশি প্রস্তুত,'' বলছেন ওয়েলকাম ট্রাস্টের চিকিৎসক জোসি গোল্ডিং।




করোনা ভাইরাস কি? করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা
করোনা ভাইরাস কি? করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা



লক্ষণগুলো কতটা মারাত্মক?

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হল সর্দি, কাশি থেকে নিউমোনিয়া। সেই সাথে প্রবল জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এটা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। এতে অ্যান্টিবায়েটিক কাজ করে না বলে এই ভাইরাস কাবু করা কঠিন। প্রাথমিকভাবে এর উপসর্গও বোঝা কঠিন্ তাই নিজেকে সাবধান রাখাই শ্রেষ্ট উপায়।

বিশ্ব জুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারির কথা ভাবছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যেমনটি তারা করেছিল সোয়াইন ফ্লু এবং ইবোলার সময়।

রোগটি কতটা মারাত্মক?

ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পর্যন্ত ৪১জন মারা গেছে বলে জানা যাচ্ছে। রোগের প্রকোপের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম বলে মনে হলেও, এই পরিসংখ্যান নির্ভরযোগ্য নয়।

রোগটি কোথা থেকে এসেছে?

সবসময়েই নতুন নতুন ভাইরাস সনাক্ত হয়ে থাকে।
কোন একটি প্রাণী থেকে এসে এসব ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বাধতে শুরু করে।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জোনাথন বল বলছেন, ''আমরা যদি অতীতে মহামারিগুলোর দিকে তাকাই, এমনকি এটা যদি নতুন করোনাভাইরাসও হয়, এটা কোন একটা প্রাণীর শরীর থেকে এসেছে।''

সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুরের শরীর থেকে খট্টাশের শরীরে, এরপরে সেটা মানব শরীরে চলে আসে।
মধ্যপ্রাচ্যের ফুসফুসের রোগ মার্স ( পুরো নাম: মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম), যাতে ২৪৯৪জন সংক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৮৫৮ মারা গিয়েছিলেন, রোগটি নিয়মিতভাবে এক কুঁজওয়ালা উট থেকে মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

কোন প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস?


যদিও বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা তিমি), ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও থাকে, যেমন মুরগি, বাদুর, খরগোশ, সাপ- এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুরের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে।


রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহে প্রায় ৪০ থেকে ৮০০জন আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের মধ্যেও বিভ্রান্তি আছে।
বেশিরভাগ নতুন রোগী আগে থেকেই চীনে ছিল, শুধুমাত্র চীন তাদের নজরদারি বাড়ানোর পর সনাক্ত হয়েছে।
ফলে মহামারিটির বিস্তার সম্পর্কে খুবই কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব তথ্য উপাত্তের কথা বলা হচ্ছে, সম্ভবত এর চেয়ে বেশি মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

চীনের বাইরেও যেভাবে রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে, তাই ধারণা করা হচ্ছে হচ্ছে চীনের সরকার আক্রান্তের যে সংখ্যা বলছে (প্রায় ৪০০০ রোগী), আসল রোগীদের সংখ্যা তার দ্বিগুণ। তবে তার মানে এই নয় যে, মহামারিটি দ্বিগুণ আকৃতির হয়ে গেছে।
যদিও এখনো রোগটির প্রাদুর্ভাব উহান কেন্দ্রিক, কিন্তু থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, নেপাল এবং যুক্তরাষ্ট্রে রোগী পাওয়া গেছে।


ভাইরাসটি কীভাবে ঠেকানো যেতে পারে?

আমরা এখন জানি যে, ভাইরাসটি নিজে থেকে ধ্বংস হবে না। শুধুমাত্র চীনের কর্তৃপক্ষে নেয়া পদক্ষেপই এই মহামারীর অবসান ঘটাতে পারে।
ভাইরাস প্রতিরোধক করতে কোন ভ্যাকসিন বা টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
এই রোগ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া।

যার মানে হলো:

মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেয়া।
হাত ধুতে সবাইকে উৎসাহিত করা।
স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পড়ে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া।
রোগীদের ভাইরাস রয়েছে কিনা তা জানতে এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা লোকদের সনাক্ত করার জন্যও গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড বা নজরদারি ব্যবস্থার প্রয়োজন।


বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গার তুলনায় নজিরবিহীন কিছু কাজ করেছে চীন- বিশেষ করে উহান অঞ্চলটিকে একেবারে আলাদা করে দিয়ে।
আরো প্রায় একডজন শহরের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ।
অনেক এলাকায় বড় জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অনেক পর্যটন এলাকা, যার মধ্যে চীনের গ্রেট ওয়াল রয়েছে, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রাদুর্ভাবের মূল কেন্দ্রস্থল- উহানে নতুন একটি হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে ১০০০ শয্যা হবে।

কীভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিশ্ব?

উহান থেকে আসা ভ্রমণকারীদের পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ। রোগটির প্রাদুর্ভাবের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
উহান থেকে আসা বিমানযাত্রীদের পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে সিঙ্গাপুর এবং হংকং। একই ধরণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য।




না, নেই।
তবে রোগটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে মার্স ভাইরাসের (সেটিও একটি করোনাভাইরাস) প্রতিষেধক আবিষ্কারে যে গবেষণাটি চলছিল, সেটির কারণে এই কাজ অনেক এগিয়ে যাবে।



১. নিজেকে সবসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
২. বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন এবং প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
৩. অযথা হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষা থেকে বিরত থাকুন।
৪. আক্রান্ত ব্যক্তি হতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
৫. হাঁচি/কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করুন এবং ব্যবহারের পরে ডাস্টবিনে ফেলে দিন।


Related: coronavirus in cats, coronavirus sars, coronavirus treatment, can you test for coronavirus, coronavirus vs adenovirus, coronavirus shape, mers coronavirus symptoms, can coronavirus in dogs spread to humans, trs coronavirus, sars virus replication, mers classification, coronavirus pathophysiology, coronavirus nl63, coronaviridae, মার্স করোনা ভাইরাস, মার্স করোনা, করোনা ভাইরাস কি? 











No comments

Powered by Blogger.